বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও এটি নিয়ে শিক্ষার্থীমহলে সামান্য বিতর্ক আছে। কারণ, একজন শিক্ষার্থী, যে দরিদ্র, ক্লান্ত ও ক্রমাগত ক্ষুধার্থ তার জন্য এটা তুলনামূলকভাবে চ্যালেঞ্জের বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি- আপনি যখন ডায়েট করেন, তখন কিভাবে শুধুমাত্র একটা ইন্সট্যান্ট নুডুলস খেয়েই আপনি সুস্থ থাকেন? কিংবা, যখন আপনার অনেক একাডেমিক প্রেশার থাকে, আপনি ঠিক সে সময় কিভাবে একটা পার্ট-টাইম চাকুরি করেন? অথবা, এটা কিভাবে সম্ভব যখন আপনি সাপ্তাহিক ছুটিতে আপনার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যান যখন আপনার এক বেলা খাবার ম্যানেজ করতেই কষ্ট হয়ে যায়?
এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে ও আপনাকে সাহায্য করার জন্য কিছু টিপস আমরা এখানে উপস্থাপন করেছি-
১। বাজেট প্রণয়ন করা শিখুন
এখানে আপনাকে বাস্তবধর্মী হতে হবে। আপনি যদি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করে থাকেন, তাহলে আপনি যেকোন আকস্মিক অর্থ সংকট এড়িয়ে চলতে পারবেন। তাই বাজেট প্রণয়নে সময় নিন। আপনার আয়-ব্যয়ের হিসাবের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন। সেখানে আপনি প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক টাকা জমা করবেন। এ সময়ের আধুনিক ব্যাংকিং সিস্টেমে প্রায় সকল ব্যাংকেরই নিজস্ব এপ আছে। যেখানে আপনি আপনার আয়-ব্যয়ের সকল হিসেব এক নিমিষেই দেখতে পারবেন। যার ফলে আপনি আপনার মাসিক বাজেটের মধ্যে থেকেই সকল আয়-ব্যয় নির্বাহ করে থাকবেন। সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, স্টুডেন্ট একাউন্টে ব্যাংক কোন প্রকার চার্জ কাটে না।
২। সঠিক সময়ের মধ্যে রাতে বাসায় ফিরুন
ব্যক্তিগত জীবনের দৈনিক ক্লান্তি ও অবসাদ থেকে একটু নিস্তার পাওয়ার জন্য আমরা মাঝে মধ্যে বন্ধুদের সাথে বসে রাতে আড্ডা দিয়ে থাকি কিংবা রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। আসলে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এসকল বিষয় আপনাকে নতুন করে আরো বেশি কাজ করার শক্তি জোগায় ও পূর্ণ উদ্যমী করে তোলে। তবে বেশি রাত বাহিরে থাকা যাবে না। কারন বেশি রাত বাহিরে থাকলে সেটি আপনার দৈনন্দিন ঘুমের রুটিন ও পরবর্তী দিনের কাজকে নেতিবাচকভচাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আপনাকে সঠিক সময়ে রাতে বাসায় ফিরতে হবে।
৩। খাবারের রুটিন তৈরি করুন
আপনার সামর্থ্য, পছন্দ ও পুষ্টির মান অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করুন। সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে রুটিন তৈরি করুন এবং খাবার নির্বাচনে বৈচিত্র্য আনুন। অতিরিক্ত দামি খাবারের পিছনে অর্থ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকুন। সুপারশপগুলো কাস্টমারদের আকর্ষণ করার জন্য মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন পণ্যে বিশাল ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। সময়মতো সে সুযোগ গুলোকে কাজে লাগান।
৪। সেমিনারে কৌশলী প্রশ্ন এড়িয়ে চলুন
মনে করুন, আসন্ন সেমিনার নিয়ে আপনি কিছুই জানেন না কিন্তু আপনি আবার সেমিনারে যোগদান করতেও প্রবল আগ্রহী। তাই আপনি যদি সেমিনারটি মিস দিতে না চান আপনাকে এখানে কিছুটা কৌশলী হতে হবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আপনাকে ৩টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ-
*চোখে চোখ রাখা থেকে বিরত থাকুন- আপনি যদি কিছু না জানেন তাহলে যিনি সেমিনারটি পরিচালনা করছেন তার চোখে যত কম চোখ রাখা যায় সেটা খেয়াল রাখবেন। আপনি ভান করুন যেন আপনি সেমিনারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করছেন। চারপাশে চলমান চিত্তাকর্ষক আলোচনার সাথে নিজেকে যুক্ত করুন।
*দলগত কাজে যুক্ত হন- অন্যরা কী বলছে তা শুনুন এবং অন্য দলগুলো যা আলোচনা করছে তার উপর ভিত্তি করে একটি মতামত তৈরি করার চেষ্টা করুন। ট্রেইনার যদি আপনার চিন্তাভাবনা জানতে চান, তাহলে দলের অন্য কেউ যা বলেছে তা হুবুহু কপি করবেন না। কারণ এটি আবার আপনার নিজের দলেই প্রতিদ্বন্ধি তৈরি করতে পারে।
*যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলুন- আলোচনা শুরু হলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা বলার চেষ্টা করুন। আপনি যদি খুব বেশিক্ষণ চুপ থাকেন, তাহলে শেষের দিকে আপনি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই উপযুক্ত কৌশল হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব কথা বলা।
৫। দ্রুত পড়তে শিখুন
আপনি যদি পড়া না শিখে সাহস করে ক্লাসে চলে আসেন তাহলে এক্ষেত্রে একটা বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনি যেহেতু পড়া শিখে আসেন ই নি তাই গুগল করে সেটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিতে পারেন। পড়া সম্পর্কিত কিছু রিসোর্স ঘেটে দেখলেই আপনি ঐ পড়া সম্পর্কে ওভারভিউ পেয়ে যাবেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো হাইলাইট করে বারবার দেখুন। আমরা আপনাকে একটি সম্পূর্ণ উপন্যাস দ্রুত পড়ার পরামর্শ দেব না কিংবা এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করবো না । তবে এটি না পড়ার চেয়ে তুলনামূলক ভালো।
৬। প্রয়োজনের সময় সাহায্য নিন
কোর্সওয়ার্ক চালিয়ে যেতে আপনি যদি বাধার সম্মুখীন হন অথবা কোন বিষয় না বুঝে থাকেন, তাহলে আপনার টিউটরদের সাথে কথা বলুন। আপনি যদি কথা না বলে এ অবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত করেন, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতেই থাকবে। পাশাপাশি, পিতামাতার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চাওয়া আপনার কাছে একটি কঠিন পরিস্থিতি মনে হতে পারে। তবে আমাদের সে আড়ষ্টতা কাটিয়ে উঠতে হবে। কারন, আমাদের বাবা-মা ই আমাদের পড়াশুনার ব্যয় বহন করে থাকে। এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে প্রয়োজনের সময় কোনরকম দ্বিধান্বিত না হয়ে তাদের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে হবে।
৭। কিছু বেসিক রান্না শিখে রাখুন
কিছু বেসিক রান্না শিখে রাখতে সময় ব্যয় করুন ও আপনার পছন্দের কয়েকটি খাবার তৈরি করে ফেলুন। প্রয়োজনের সময় এটি আপনাকে ব্যাকআপ দিবে এবং আপনি এর মাধ্যমে কিছু সংখ্যক টাকা সেইভও করতে পারবেন। বাহিরের ব্যয়বহুল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেতে চাইলেও পারতপক্ষে আপনাকে রান্না শিখতে হবে।
৮। ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করা শিখুন
আমরা অনেকেই জামা কাপড় ওয়াশ করার জন্য সেগুলো লন্ড্রিতে দিয়ে থাকি। কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখা যায় যে, লন্ড্রি মালিক ভুল করে অনেকজনের কাপড় একসাথে মিশিয়ে ফেলে। এর ফলে দুটি সমস্যা তৈরি হয়।
১। একজনের কাপড় অপরজনের কাছে চলে যায়
২। একসাথে অনেক কাপড় ওয়াশ করার ফলে এক কাপড়ের রঙ অন্য কাপড়ে লেগে যায়।
তাছাড়া, লন্ড্রিতে জামা কাপড় ওয়াশ করানো একজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয়বহুলও বটে। আবার, আমাদের মধ্যে অনেকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ভয় পান। শিক্ষার্থীরা যাতে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে গিয়ে দ্বিধান্বিত না হয় সে ব্যাপারটিও নিজেদের খেয়াল রাখতে হবে।
৯। ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখুন
ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। অন্যথায় আপনার ঘরটি নোংরা হয়ে যাবে এবং এটি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলবে। স্বভাবত আপনি নিজেও এরকম একটি ঘরে থাকতে চান না যেটি ময়লা দিয়ে পরিপূর্ণ। তবে আপনার ঘর পরিষ্কার করার জন্য যদি কোন গৃহকর্মী থাকে এবং দুর্ভাগ্যবশত সে যদি অলস প্রকৃতির হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য সেটা কিন্তু বিপদ বয়ে আনতে পারে। তাই নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে হলেও তার সাথে মিলেমিশে কাজ করুন। প্রয়োজন হলে একজন আরেকজনকে পিতজা পার্টি দিতে পারেন। তাহলে অতি দ্রুত ও খুব অল্প সময়েই কাজটি শেষ হয়ে যাবে।
১০। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
একজন শিক্ষার্থীর একাডেমিক সাফল্যের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। এটি তাকে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষন, স্মৃতিধারণ ও একাগ্রতা উন্নত করতেও সাহায্য করে। ভালো মানসিক স্বাস্থ্য একজন শিক্ষার্থীর সফলতার পুর্বশর্তও বটে। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে অলসতা, হতাশা ও অবসাদ শরীরে বাসা বাঁধে। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।
১১। ঝামেলাজনক হাউসমেটদের মোকাবিলা করুন
আপনার হাউসমেটরা যদি পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলে তাহলে তাদের সাথে কথা বলুন। তাদেরেকে উপেক্ষা করে আপনি কখনোই এ পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পাবেন না। বরং এটি আরো আক্রমনাত্মক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া, তারা যদি আপনার বন্ধু হয়ে থাকে তাহলে এরকম একটি পরিস্থিতি আপনাকে আরো বেকায়দায় ফেলতে পারে। আপনি বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে যদি এ ঝামেলার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেন, সেটা হীতে বিপরীত হতে পারে। তাই তাদের সাথে একটি নেগোসিয়েশনে আসুন ও উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করুন।
১২। কুচক্রী মহল থেকে সাবধান থাকুন পড়াশোনা করার নিমিত্তে আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছে যারা অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একটি অসাধু মহল এ সুযোগের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। বিশেষ করে, একজন শিক্ষার্থী যখন বাড়িওয়ালাদের সাথে লেনদেন এবং বিল পরিশোধ করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে ডিল করেন, তখন দুঃখজনক সত্য হল যে, অনেক বাড়িওয়ালা বিভিন্ন ইউটিলিটি বিলের নাম করে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত টাকা চার্জ করেন যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিন।
অনুবাদক: এস, এম, সায়েম
সোর্স: www.savethestudent.org