জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশে পড়তে যেতে যা যা ডকুমেন্টস লাগবেঃপ্রায়ই দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বা পথ-পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। অনেকেই ভাবেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া কঠিন। অথচ সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত থাকলে, এই লক্ষ্য খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব! বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য শুধু ডকুমেন্টস জমা দিলেই হবে না – আগে আপনার প্রোফাইলটাও শক্তিশালী হতে হবে। নিজের যোগ্যতা তৈরি করা, সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রাম বাছাই করা, এগুলোই আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে দেবে। আজ আমরা জেনে নেব, কীভাবে শুরু করবেন এই প্রস্তুতি।
প্রথমেই একনজরে জেনে নেয়া যাক ডকুমেন্টস সংগ্রহ করার পূর্ববর্তী পদক্ষেপ গুলো সম্পর্কেঃ
বাংলাদেশিদের জন্য স্কলারশিপের ওয়েবসাইট
১। সার্টিফিকেটে আপনার নাম বা পিতামাতার নামের বানানসহ কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধনের সময় নিশ্চিত করুন যে আপনার জন্মসনদ, সার্টিফিকেট, এবং পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রে (NID) একই নাম ও বানান আছে।
২। পাসপোর্ট তৈরির সময় আগের সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাম ও স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা নিশ্চিত করুন। যেন জন্মসনদে বর্তমান ঠিকানা একটি থাকলে পাসপোর্টে ভুলক্রমে অন্য কোনো ঠিকানা না আসে।
৩। SSC ও HSC এর নম্বরপত্র ও সার্টিফিকেট বোর্ড থেকে সংগ্রহ করুন এবং মাস্টার্সে ভর্তির জন্য অনার্সের সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করে রাখুন।
৪। সার্টিফিকেট সংগ্রহের পর শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করুন।
৫। IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া ভালো, কারণ কাঙ্ক্ষিত স্কোর তুলতে অনেকের বেশি সময় লাগে। এতে অনেকে সেশন মিস করে, যার ফলে এডুকেশন গ্যাপ বাড়ে এবং ভিসা পাওয়া কঠিন হয়।
৬। স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য SAT/ACT এবং স্নাতকোত্তরের জন্য GRE/GMAT পরীক্ষার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া ভালো।
৭। পরিচিত ও আপনাকে ভালো জানেন এমন শিক্ষকদের মধ্যে থেকে দুইজনের রেকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করে রাখুন।
৮। বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য SOP লেখা গুরুত্বপূর্ণ, তাই আগেই এর প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নিন বা ফেসবুক গ্রুপ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজের মতো করে SOP লিখুন, যাতে ভাষা স্বতন্ত্র হয়।
৯। পড়তে যাওয়ার দেশের ব্যাকগ্রাউন্ড অনুযায়ী অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে রাখুন এবং পছন্দের বিষয়টি আপনার পূর্বের পড়াশোনার সাথে মিল রেখে নির্বাচন করুন। যেমন, HSC-তে সায়েন্স পড়ে থাকলে সায়েন্স-সংক্রান্ত সাবজেক্ট এবং ব্যবসা শিক্ষা থেকে পড়লে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট বেছে নিন।
১০। বাজেট ও পছন্দের শহরসহ সবকিছু বিবেচনা করে অন্তত পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ আগে থেকেই নির্বাচন করে রাখুন।
১১। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আবেদনের ডেডলাইন লক্ষ্য রেখে আগে থেকেই আবেদন করুন।
১২। যদি সহজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, স্কলারশিপ ও ভিসা পেতে চান, তবে কিছু ভলেন্টিয়ার সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে তার প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখুন।
১৩। যদি সম্ভব হয়, ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে রাখুন।
১৪। যদি সম্ভব হয়, দেশে থেকে Microsoft Office, Word, PowerPoint ইত্যাদি স্কিল আপগ্রেড করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন, যা বিদেশে অনেক সহায়ক হবে।
উপরিউক্ত কাজগুলো আগে থেকেই সম্পন্ন করা থাকলে আপনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করতে শুরু করুন। আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব কী কী ডকুমেন্টস লাগবে এবং কীভাবে প্রস্তুতি নিলে আপনি হয়ে উঠবেন আত্মবিশ্বাসী। আশা করি, এটি আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশে পড়তে যেতে হলে যা যা ডকুমেন্টস লাগবেঃ
১. একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টঃ অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট প্রয়োজন হবে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় মিনিমাম সিজিপিএ ৩.০০ চায়, তবে উন্নত গ্রেড থাকলে সুবিধা হয়। সিজিপিএ কম হলে অন্যান্য দিক দিয়ে (যেমন: GRE, TOEFL, SOP) নিজের যোগ্যতা বাড়ানো জরুরি।
২. পাসপোর্টঃ পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে যাওয়া সম্ভব নয়, এবংIELTS, GRE, TOEFL পরীক্ষাও দেওয়া যায় না। তাই, প্রস্তুতি শুরু করার সাথে সাথেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে সংগ্রহ করে ফেলুন।
৩. GRE/GMAT স্কোরঃ যেভাবে অনার্সে ভর্তি হতে এইচএসসি লাগে, তেমনি আমেরিকাসহ অন্যান্য ভালো দেশে মাস্টার্স বা পিএইচডির জন্য GRE বা GMAT স্কোর প্রয়োজন। বিজনেস স্কুলে GMAT, অন্য ক্ষেত্রে GRE লাগে। পুরনো সিস্টেমে ১১৫০+ এবং নতুন সিস্টেমে ৩০০+ স্কোর হওয়া জরুরি, এবং বেশি স্কোর থাকলে সুবিধা।
৪. IELTS / TOEFL স্কোরঃ IELTS/TOEFL ইংরেজি দক্ষতা প্রমাণের জন্য লাগে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় IELTS -৬.৫-৭ চায় আবার TOEFL এর ক্ষেত্রে ৮০ (১২০-এর মধ্যে) স্কোর চায়, তবে ফান্ডিং পেতে হলে IELTS এ ৬.৫+ এবং TOEFL এ ৯০ বা তার বেশি স্কোর প্রয়োজন।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় অনুসন্ধান এবং প্রফেসরের সাথে যোগাযোগঃ GRE/GMAT এবং IELTS/TOEFL প্রস্তুতির সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা এবং সম্ভাব্য সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রি স্কোর পাঠানো যায় (GRE পরীক্ষার দিনে এবং TOEFL পরীক্ষার আগের দিনে)। তাই সেগুলো আগে থেকে সিলেক্ট কিছু সময় ব্যয় করা উচিত।
৬. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP): কিভাবে, কখন, কেন আপনার আগ্রহ এই বিষয়ে গড়ে উঠলো, আপনার এই বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা, কেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয় আপনার পছন্দ, এবং এখানে পড়ার পর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা – এসব নিয়ে একটি ২ পৃষ্ঠার রচনা লিখতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ২-৩ মাস ধরে লিখা, এডিট এবং রিভাইজ করা প্রয়োজন। অনেক সময় ফান্ডিংও এর ওপর নির্ভর করে। নকল করা থেকে বিরত থাকুন।
৭. রিকমেন্ডেশন লেটার (LOR): রিকমেন্ডেশন লেটার হলো আপনার স্যার বা রিসার্চ সুপারভাইজার কর্তৃক আপনার দক্ষতা ও গুণাবলী নিয়ে লেখা একটি চিঠি, যা আপনার প্রফেশনাল যোগ্যতা তুলে ধরে।
৮. সিভিঃ সিভি বা বায়োডাটা এখন শুধু চাকরি বা বিয়ের জন্য নয়, বিদেশে পড়াশোনা করার জন্যও অপরিহার্য। এটা ছাড়া তো কিছুই হয় না!
৯. রিসার্চ প্রপোজালঃ রিসার্চ প্রপোজাল হলো আপনার গবেষণার উদ্দেশ্য, সমস্যা, পদ্ধতি ও প্রত্যাশিত ফলাফল সম্বলিত একটি পরিকল্পনা। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন বা স্কলারশিপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার গবেষণার মান ও পদ্ধতি তুলে ধরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিসার্চ এর সুযোগ নেই তাই অনেকে এই ব্যাপারটাতে ঘাবড়ে যায় এবং সঠিক উপায় খুজে পেতে কষ্ট হয়।
National University Research Hub and Scholarship Abroad জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উক্ত কষ্ট দূর করে সঠিক পদ্ধতিতে রিসার্চ এর বেসিক থেকে এডভান্স লেভেল পর্যন্ত দক্ষ করে তুলতে একটি পরিপূর্ণ রিসার্চ কোর্সের আয়োজন করেছে। যার ফলে এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রিসার্চ করতে পারবে, পাবলিকেশন এর সুযোগ পাবে এবং এতে যেমন প্রোফাইল টা শক্ত হবে তেমনি স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে থাকবে।
কোর্স লিংকঃ https://course.nurhsa.org/…/research-for-everyone…/
১০. আর্থিক ডকুমেন্টঃ এটি একটি ফরম্যালিটি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের খরচ চালানোর জন্য আপনার (অথবা আপনার বাবা-মা, নিকট-আত্মীয় বা পারিবারিক বন্ধুর) ব্যাংক একাউন্টে যথেষ্ট টাকা আছে কিনা, তার একটি ডকুমেন্ট প্রয়োজন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি অ্যাডমিশন সিদ্ধান্তের পর জমা দিতে হয়। তবে, যদি সহায়তার কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়, তাহলে এই ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়ে না।
১১. মেডিক্যাল সার্টিফিকেটঃ এটি একটি দলিল, যা নিশ্চিত করে যে আপনার শরীরে অথবা মনে কোনো গুরুতর রোগ নেই এবং ভবিষ্যতে তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় টীকা দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় আবেদন করার সময়ে এটি প্রয়োজন হয় না, তবে অ্যাডমিশন পাওয়ার পর এটি জমা দিতে হতে পারে।
১২. ফোন ইন্টারভিউঃ অনেক সময় আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা আপনার সাথে স্কাইপি বা সরাসরি ফোনে সাক্ষাৎ করতে চাইতে পারে।
১৩. অনলাইন আবেদনপত্রঃ ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের পোর্টালে একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন পূরণ করতে হয়, যেখানে আপনার পূর্ববর্তী পড়াশোনার ইতিহাস, বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি দিতে হয়। এছাড়া, SOP, রিকমেন্ডেশন লেটার (LOR) এবং সংশ্লিষ্ট স্যারদের কন্ট্যাক্ট ইনফরমেশনও এই পোর্টালে দিতে হয়। সাধারণত, CV-ও এখানেই আপলোড করতে হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশে পড়তে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর বেশ ভালোভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন সঠিক পরিকল্পনা সফলতার প্রথম সূত্র। তাই আপনাকে আগে থেকেই উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
Post Credit-
Content Team
National University Research Hub & Scholarship Abroad