Research

আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা

সবুজের দেশ, হৃদয়স্পর্শী প্রকৃতি আর বিশ্বমানের শিক্ষার এক অসাধারণ মেলবন্ধন! ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ আয়ারল্যান্ড। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী এখন পাড়ি জমাচ্ছেন আয়ারল্যান্ডে। আয়ারল্যান্ড দেশটির অফিসিয়াল নাম “রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড” আর অফিসিয়াল ভাষা আইরিশ ও ইংরেজী। এই দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী হল ডাবলিন। ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির উৎকর্ষে অবস্থিত এই দেশে মুদ্রা ইউরো। এই দেশ মূলত শীত প্রধান এবং এই দেশের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আয়ারল্যান্ডের আয়তন ৭০,২৭৩ বর্গকিঃমিঃ আর লোকসংখ্যা ৪৭,৫৭,৯৭৬ জন। এই দেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৯,০০০ মার্কিন ডলার। তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, আয়ারল্যান্ড সেঞ্জেনভুক্ত দেশ নয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চশিক্ষার আশায় চলে আসছে আয়ারল্যান্ডে।
এই দেশের অন্যতম অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজী হওয়ায় অনেক কোর্স রয়েছে ইংরেজী ভাষায়। এই দেশে ব্যাচেলর ডিগ্রি সাধারণত ৩ – ৪ বছরের হয়ে থাকে, মাস্টার্স ১.৫ – ২ বছর এবং ডক্টরেট ৩-৪ বছরের হয়ে থাকে। তাই আপনার জন্যও হতে পারে এই দেশ বিদ্যাশিক্ষার অন্যন্য স্থান।
কেন আয়ারল্যান্ড?

  • বিশ্বমানের শিক্ষা: আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
    ইংরেজি ভাষা: আয়ারল্যান্ডের অফিসিয়াল ভাষা ইংরেজি, তাই ভাষার কোনো বাধা থাকবে না।
    কাজের সুযোগ: পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজের সুযোগ রয়েছে, যা তোমার খরচ মিটাতে সাহায্য করবে।
    সুন্দর পরিবেশ: সবুজের ভূমি আয়ারল্যান্ডে তুমি এক অন্যরকম শান্তি আর স্বস্তি খুঁজে পাবে।

কোর্স সার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো World Ranking এর তালিকায় উপরের দিকে অবস্থিত হওয়ায় অনেকেই এই দেশে পড়াশুন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য আসতে চায়। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জনপ্রিয় কিছু কোর্স –
অ্যাকাউন্টিং, অ্যাগ্রিকালচার, অ্যানাটমি, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিয়েশন স্টাডিজ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স, বায়োমেডিকেল সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, সিরামিকস, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া, ডান্স, ড্রামা, ই-কর্মাস, ইকোনমিকস, একাউনট্যান্সি, এবরোজিনাল এন্ড ইনডিজিনাস স্টাডি, অলটারনেটিভ মেডিসিন, এনথ্রপলজি, অ্যাপায়েড ম্যাথমেটিকস, একুয়াকালচার, কেমিষ্ট্রি, এনভায়রোনমেন্টাল স্টাডিজ, বিজনেস এন্ড ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করা যায়।

আয়ারল্যান্ডে পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা
আয়ারল্যান্ডে বছরে দুইটি সেমিস্টার পড়ানো হয়। একটি ফল সেমিস্টার অপরটি স্প্রিং সেমিস্টার। ফল সেমিস্টার চলে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আর স্প্রিং সেমিস্টার চলে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত।
ব্যাচেলর প্রোগ্রামে যদি এই দেশে পড়তে চান তাহলে আপনার থাকতে হবে ১২ বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাৎ এইচএসসি পাস হতে হবে। আর আপনাকে IELTS-এ ৫.৫ থেকে ৬.০ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৩ বা IBTতে ৭৯ থেকে ৮০ পয়েন্ট হতে হবে। অন্যদিকে, আপনি যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার থাকতে হবে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাৎ, আপনাকে শেষ করতে হবে ব্যাচেলর ডিগ্রী। এবং আপনাকে IELTS-এ ৬.০ থেকে ৬.৫ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৩ থেকে ২৩৭ বা IBT-তে ৭৯ থেকে ৯৩ পয়েন্ট থাকতে হবে। আপনার GRE/GMAT প্রয়োজন হবে কি না সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন তার উপর।

কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
1.একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
2.ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট (আইইএলটিএস, টফেল)
3.পাসপোর্ট
4.ব্যাংক স্টেটমেন্ট (অবশ্যই লাগবে)
5.লার্নিং পারমিট
6.রেফারেন্স লেটার

Germany: Top Funding Subjects, Sectors & Institutes

ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা?
যদি তোমার সব ডকুমেন্ট ঠিকঠাক থাকে এবং তুমি যোগ্যতা পূরণ করো, তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ
আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রির ক্ষেত্রে বছরে ১০ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ১৫০ ইউরো এবং মাস্টার ডিগ্রির ক্ষেত্রে সাত হাজার ৪০০ থেকে ১৫ হাজার ৭২০ ইউরো টিউশন ফি লাগে। তবে কলেজে পড়াশোনা করতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ কম হয়। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরো দিয়েই অনায়াসে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর লেভেলে স্কলারশিপের সুযোগ ক্ষীণ। কিন্তু মাস্টার্স প্রোগ্রামে স্কলারশিপের সু্যোগ তুলনামূলক বেশি। আয়ারল্যান্ডে ন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রোগ্রামের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এই দেশে প্রায় ১০০ এর মত বিভিন্ন ধরণের স্কলারশিপ অফার করা হয়ে থাকে।

পার্ট টাইম কাজ?
আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্ট টাইম কাজ করার অনুমতি রয়েছে। আপনি সামারে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা জব করার সুযোগ পাবেন। রেস্টুরেন্ট, দোকান, শপিং মলে কাজ করে ঘণ্টায় ৭ থেকে ১২ ইউরো পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। আয়ারল্যান্ডে আপনি পার্ট টাইম জব করার সুযোগ পাবেন কিন্তু এই পার্ট টাইম জব করে পুরো টিউশন ফি জোগাড় করা সম্ভব হয়ে উঠবে না।
আর ৫ বছর আয়ারল্যান্ডে বৈধভাবে বসবাস করলে আপনি আবেদন করতে পারবেন PR এর জন্য।
আয়ারল্যান্ড ইউরোপের পশ্চিম উপকূলের অন্যতম সুন্দর দেশ। আপনি এই দেশে অনেক সুবিধা পাবেন। হয়ত আয়ারল্যান্ড আপনার জন্য উন্মোচন করবে সুন্দর ভবিষ্যতের অনেক সম্ভবনা। তাই আজই করুন নিজের আবেদন নিজেই- আর সেরে নিন আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা।

আয়ারল্যান্ডে ভিসা প্রাপ্তির জন্য আপনাকে ব্যাংকে প্রায় ১০,০০০ ইউরো দেখাতে হবে। আর যদি আপনার খরচ বহন করে অন্য কোন স্পন্সর, তাহলে তাকে নোটারাইজড অংগীকারনামা দিতে হবে যে তিনি আপনার সকল খরচ বহন করবে। তার জন্য প্রয়োজন পরবে, আপনার স্পন্সরের ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলঃ
১। পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
২। পাসপোর্ট ও ফটোগ্রাফ
৩। CV, Statement of Purpose (SOP) ও রেফারেন্স
৪। সকল মার্কশিট ও সনদ, IELTS-GRE সনদ
৫। No Objection Certificate [শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে]
৬। অফার লেটার
৭। ব্যাংক সলভেন্সি পেপ্যার
৮। ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৯। পুলিশ ক্লিয়ারান্স
১0। হেলথ ইন্স্যুরেন্স ও মেডিক্যাল রিপোর্ট ইত্যাদি

আবেদন কিভাবে করব?
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

কয়েকটি জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
১. ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটি (www.dcu.ie )
২. ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব অ্যায়ারল্যান্ড (www.nuigalway.ie )
৩. ট্রিনিটি কলেজ, ডাবলিন (www.tcd.ie )
৪. ইউনিভার্সিটি কলেজ, ডাবলিন (www.ucd.ie )
৫. রকওয়েল কলেজ (www.rockwellcollege.ie )
৬. গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি (www.gcd.ie )
৭. অ্যাথোলেন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (www.ait.ie )

আবেদন কখন করব?
সাধারণত আগাম আবেদন করা ভালো। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন শুরু করে দাও।

Witten by- Nadim Mahmud

Shares:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *