বড় ভাইয়ের সিভি নিয়ে তার মধ্যে নিজের নাম ঠিকানা বসিয়ে সিভি তৈরিকে আমি বলবো প্রথম ভুল। ক্যারিয়ারের শুরুতেই নির্ভরশীলতা কি ঠিক? আমরা প্রত্যেকেই ইউনিক, প্রত্যেকের সিভিও ইউনিক।
◾️ সিভিতে অনেকেই মেইল আইডি পাওয়া যায়ঃ
voboghure@yahoo.com
mailto:voboghure@yahoo.com
paglababa@gmail.com
নিশ্চিত থাকতে পারেন, এরকম আজে বাজে মেইল আইডি থাকলে ইহ জনমে ইন্টারভিউয়ের ডাক পাবেন না।ইমেল আইডি যেমন হলে ভালো হয়- mdbulbulislam607@gmail.com. ২টি শব্দের মাঝে কোন নম্বর দিয়ে ইমেল আইডি ব্যিবহার করাটা ভালোনা। সেই সাথে Certificate নাম দিয়ে ইমেল আইডি ব্যবহার করা উত্তম।
◾️ লিঙ্কডইন রেডি রাখবেন সব সময়। যে কেউ যেন ভিজিট করলেই আপনার সম্পর্কে জেনে যায়।
◾️একই সিভি চালিয়ে দিচ্ছেন গবেষক, মার্কেটিং, ব্রান্ডিং, একাউন্ট যে কোন চাকরীর জন্য। ধরুন, আপনি মুরগি রাঁধবেন। একই মশলা দিয়ে কি গ্রিল, তান্দুরি, রোস্ট, কাবাব তৈরি সম্ভব? নিশ্চয়ই না। আপনাকেও প্রতিবার আবেদন করার সময় মশলা চেঞ্জ করতে হবে। নয়তো কেউ ডাকবে না।
◾️স্কুলের ছবি দিয়ে চাকরির জন্য আবেদন করা মস্ত বড় ভুল। আপনাকে একজন লোক যে ইন্টারভিউর জন্যে ডাকবে, সিভি খুলে সে যখন আপনার স্কুলের ছবি দেখবে, সে কি আপনাকে ডাকবে আর?
◾️A4 আকারের কাগজের মাপে সিভি তৈরি করতে হবে। চারপাশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ‘মার্জিন’ রাখতে হবে। সাদা কাগজে কালো কালিতে তথ্যগুলো লেখা থাকবে। সিভির পটভূমিতে অন্য কোনো রং ব্যবহার না করাই ভালো।
◾️ গ্রামার ও বানান CV তে ভুল সিভির মারাত্মক আরেকটি ভুল। অনেকে বড় ভাইয়ের সিভিতে কি লিখা আছে তার বাংলা অর্থও জানেন না অথচ সেই সিভি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
◾️ফ্রেশারদের সিভিতে কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ থাকতে হবে। চার বছরে এক বছর সকলে ছুটিই কাটান। কিছু না কিছু এই সময়ে করতে হবে। মনে রাখবেন, মৃত্যুর পর ঘুমানোর অনেক সময় পাবেন। আলসেমি করে, ঘুমিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।
◾️ট্রেনিং না থাকাটা সিভির আরেকটি বড় দুর্বলতা। ট্রেনিং করুন। সিভি স্ট্রং হবে। কাজে দিবে।◾️কেন আমি সেরা? কেন আমাকেই ডাকবেন ইন্টারভিউর জন্যে? এটা যদি সিভিতে ফুটে না ওঠে, আপনি ইন্টারভিউ কল পাবেন না।
◾️বেশি পুরানো তথ্য সিভিতে রাখবেন না। নতুন নতুন কাজ প্রোফাইলে যুক্ত হলে পূর্বের কাজগুলো সরিয়ে ফেলুন।
◾️সিভি আপডেট করবেন প্রতিমাসে, নয়তো কি কাজ করেছেন মনে থাকবে না। আজ করি কাল করি করে করে সময় নষ্ট করবেন না।
◾️অনেক প্রতিষ্ঠানকে একই সিভি দেওয়া। এ বিষয়টি অনেক চাকরিপ্রার্থীই জানেন না। কিন্তু আপনি যদি একই সিভি সব চাকরির আবেদনে দিতে থাকেন তাহলে তাতে চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা সত্যিই কমে যায়। দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিঃসন্দেহে ভিন্ন ভিন্ন পদে, ভিন্ন কাজের মানুষ দরকার। তাদের সবাইকে আপনার একটাই পুরনো সিভি দিলে তা তাদের নিকট আকর্ষণীয় হবে না। এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৬ ভাগ প্রতিষ্ঠান সিভি একজাতীয় হওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে দেয়। এর প্রতিকার হিসেবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সিভি দেওয়ার আগে তাদের দেওয়া চাকরির বর্ণনা থেকে নিজের সিভিকে নতুন করে সাজিয়ে নেওয়া।
◾️দক্ষতাগুলো উল্লেখ না করা। আপনার নানা দক্ষতা হয়তো নিজের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু নিয়োগকর্তার কাছে এসব দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কম্পিউটারে কতোটা দক্ষ, টিমওয়ার্কে কতোটা সফল, বিদেশি ভাষায় কতোটা সাবলীল সিভিতে এসব ঠিকঠাক লিখতে ভুলবেন না।এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ ভাগ নিয়োগকর্তা সিভিতে দক্ষতার বর্ণনা না থাকায় সিভিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে আলাদা একটি বিভাগ তৈরি করে সেখানে আপনার দক্ষতাগুলো উল্লেখ করতে পারেন।
◾️অতিরিক্ত ডিজাইন করা। আপনার সিভিতে যদি বহু ফন্টের সমাহার এবং প্রচুর বুলেটের ব্যবহার থাকে তাহলে তা নিয়োগকর্তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারে। আপনার সিভির মূল লক্ষ্য থাকবে চাকরিটির জন্য আপনি কতোটা যোগ্য তা তুলে ধরা। এখানে নিয়োগকর্তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিষয় তুলে ধরা যাবে না।এ কারণে সিভিতে রাখতে হবে পরিষ্কার একটি ডিজাইন। এতে থাকবে পরিষ্কার লাইন ও ঝরঝরে ফন্ট। এতে সামান্য পরিমাণ মানসম্মত রং ব্যবহার করে জব টাইটেলটি ভিন্ন করা যেতে পারে। কিন্তু বহু রং ও স্টাইলের ব্যবহার করা যাবে না।এছাড়া ভাষাগত দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। একঘেয়ে ভাষার ব্যবহার বাদ দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ‘developed’ কথাটা বহুবার ব্যবহার। এতে পাঠক ঘুমিয়ে পড়তে পারে
◾️সিভি সঠিক ফরমেটে না পাঠানো। অনেকে সিভি ইমেজ/ মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ফরমেটে পাঠান। কিন্তু অনেকগুলো ইমেজ একসাথে জোড়া দিয়ে, সিরিয়াল করে সাজিয়ে আপনার সিভি দেখার মত সময় আসলে রিক্রুটারের থাকে না। আবার আপনি যদি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে সিভি পাঠান তাহলে দেখা যায় আপনি হয়ত এমন কোন ফন্ট ব্যবহার করেছেন যা ওই প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে সাপোর্ট করে না/ অনুপস্থিত। এতে আপনার সিভিটা খুললে রিক্রুটার কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া কিছুই দেখবেন না।মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ফাইলে সিভি প্রিন্ট করার সময় Enable Editing করতে হয়। অনেক সময় আপনার সিভিটা পর্যবেক্ষণ করার সময় কী-বোর্ডে চাপ লেগে বানান বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু, যেমনঃ আপনার ফলাফল/CGPA পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যার সহজ সমাধান হল আপনার সিভিটা PDF করে ই-মেইল করুন।
◾️ সিভির সাথে কভার লেটার সংযুক্ত না করা। অনেকে আবেদনের বিপরীতে শুধু সিভি পাঠিয়ে দেন, কভার লেটার পাঠান না। কিন্তু কভার লেটার না চাইলেও আপনার উচিত কভার লেটার আপনার সিভির সাথে সংযুক্ত করা।
কভার লেটারে উল্লেখ করুন উক্ত চাকরির জন্য আপনি কেন যোগ্য, আপনি যদি ফ্রেশার হন তাহলে উল্লেখ করুন চাকরিটির ব্যাপারে আপনার আগ্রহ কতটা, আপনার স্কিল আর জ্ঞান কিভাবে এই চাকরিতে আপনাকে সাহায্য করবে ইত্যাদি।কভার লেটার আর সিভি একসাথে পাঠাবেন, অবশ্যই PDF ফরমেটে। অনেকে ই-মেইলের বডিতে কভার লেটার লিখে দেন এটা করা উচিত না। আলাদাভাবে কভার লেটার তৈরী করে সিভি এবং কভার লেটার একসাথে পাঠান।
CV তে ভুল গুলো শুধরে ফেলুন, নয়তো মাশুল দিতে হবে। মনে রাখবেন, শরীরের যত্ন না নিলে যেমন শরীর অসুস্থ হয় তেমনি সিভির যত্ন না নিলে ক্যারিয়ার অসুস্থ হয়ে পড়বে।
©️ Md Bulbul Islam
Edited by Tanjila Akther
Campus Ambassador
National University Research and Higher Study Association