(কী রকমের শিক্ষার্থী চান প্রফেসরেরা) যাতে করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রোফাইল সেভাবে সাজাতে পারেন আজকে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বলাই বাহুল্য, এটা পিএইচডি অ্যাডমিশনের কথা বলছি। মাস্টার্সের ক্রাইটেরিয়া আলাদা, সেটা এখানে বলছি না।
১) অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল – অনেকেই বলে থাকেন জিপিএ ব্যাপার না। তবে সেটা তখনই খাটে যখন অন্যান্য অংশগুলো মাত্রাতিরিক্ত ভালো হয়। পিএইচডি স্টুডেন্ট নেয়ার সময়ে শুরুতেই যে জিনিস দেখা হয়, তা হলো জিপিএ কি গ্রহণযোগ্য রেঞ্জে আছে কি না। একেক ইউনিভার্সিটি ও প্রফেসরের চিন্তা একেক রকম। তবে যত ভালো হয়, ততোই বাড়ে সম্ভাবনা। আর সিজিপিএ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার ডিপার্টমেন্টাল বিষয়ের কোর কোর্সে ফলাফল কেমন। যেমন, কম্পিউটার সাইন্সের কোর্সে যেমন প্রোগ্রামিং, অ্যালগরিদম, এসব বিষয়ে কেমন ফলাফল। সেগুলোতে সি লেভেলের গ্রেড থাকলে প্রফেসরেরা শুরুতেই বিরূপ ধারণা পোষণ করেন। কাজেই মোদ্দা কথা — জিপিএ ভালো করতে হবে এবং কোর কোর্সওয়ার্কে গ্রেড ঠিক থাকতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার, যে বিষয়ে পিএইচডিতে আবেদন করছেন, সেই বিষয়ের উপরে আন্ডারগ্রাডে কতটুকু পড়েছেন? যেমন কম্পিউটার সাইন্সের পিএইচডিতে অ্যাপ্লাই করতে গেলে আশা করা হয় কম্পিউটার সাইন্স বা রিলেটেড ফিল্ডে ব্যাচেলর্স থাকবে। কিন্তু যদি আপনার ব্যাচেলর্স হয় পিউর ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, তাহলে কম্পিউটার সাইন্সে পিএইচডি করার জন্য যে বেসিক জ্ঞান লাগবে, সেটা তো আপনার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাই। এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখতে হবে। সাবজেক্ট পাল্টানো সমস্যা না, কিন্তু আসলেই যে নতুন সাবজেক্টে আপনার দক্ষতা ও জ্ঞান আছে, তা প্রমাণ করতে হবে অন্যভাবে (জব এক্সপিরিয়েন্স, নতুন বিষয়ে মাস্টার্স করে নেয়া, ইত্যাদি)।
২) রিসার্চ ও পাবলিকেশন – এখনকার সময়টা খুবই প্রতিযোগিতামূলক — একেক ইউনিভার্সিটিতে শ শ পিএইচডি অ্যাপ্লিকেশন পড়ে। তাই কোনো শিক্ষার্থীর রিসার্চের অভিজ্ঞতা এবং পাবলিকেশন থাকলে সেটা কাজে দিবে।
তবে এইখানে একটা বিষয় কিন্তু আছে। বাংলাদেশের অনেক অ্যাপ্লিকেন্টের প্রোফাইলেই প্রিডেটরি সব জার্নালে পাবলিকেশন দেখি। আমি বুঝি যে দেশে বসে ভালো জার্নালে পাবলিশ করা অনেক কঠিন। কিন্তু তাই বলে ফালতু প্রিডেটরি জার্নালে গাদা খানেক পেপার দিলে সেটা হিতে বিপরীত হবে। ছাত্রাবস্থায় স্থানীয় কনফারেন্সে পাবলিশ করার চাইতে বেশি কিছু কেউ আশা করবে না। কারো যদি টপ কোনো কনফারেন্সে বা জার্নালে কিছু থাকে তবে তা সোনায় সোহাগা, কিন্তু প্রিডেটরি না এমন স্থানীয় কনফারেন্স বা জার্নালে থাকলে সেটাও ঠিক আছে। প্রিডেটরি জার্নালে একগাদা পেপার থাকা আসলে রেড ফ্ল্যাগ। আর সেসব পেপারের যদি অজস্র সাইটেশন থাকে, তাহলে তা সাইটেশন ম্যানিপুলেশন করার প্রমাণ হিসাবেই কাজ করবে।
তাই, ছাত্রবস্থায় চেষ্টা করবেন গবেষণা করতে, তবে সেটা পাবলিশ করতে গেলে ভুলেও প্রিডেটরি জার্নাল/কনফারেন্সের দিকে যাবেন না।
৩) রেকমেন্ডেশন লেটার – কার থেকে এসেছে, সেখানে কী লেখা আছে, এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীর সাথে সরাসরি কাজ করেছেন এমন কারো থেকে খুব জোরদার সুপারিশ কাজে লাগে। যেমন অমুক প্রফেসরের অধীনে যদি গবেষণা করেন এবং সেই প্রফেসর লেটারে সেটা বলেন, তাহলে তা অনেক ভালো দেখায়। ভর্তি কমিটি কিংবা প্রফেসরেরা কিন্তু রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো করেই পড়েন।
কিন্তু এর বদলে যদি অমুকে খুব ভালো ছাত্র। সে আমার কোর্স নেয় নাই কিন্তু তারপরেও আমি জানি সে ভালো ছাত্র। এইটাইপের লেটার একেবারেই কাজে আসবে না। যদি কোর্স নেন, সেই প্রফেসর লিখেন কোর্সে কেমন পারফর্মেন্স, সেটা কিছুটা কাজে আসে, কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় গবেষণা করেছেন এমন কাজের উপরে রেকমেন্ডেশন।
৪) অতিরিক্ত কিছু – উপরের বিষয়গুলোর পরে আছে আরও কিছু ব্যাপার। অন্যান্য কিছু স্কিল থাকলে সেটা অনেক সময়ে কাজে দিবে। যেমন, সব পিএইচডিতেই ডেটা প্রসেসিং এর ব্যাপার থাকে। তাই ডেটা প্রসেসিং সফটওয়ার, স্ট্যাটিস্টিকাল প্যাকেজ, এগুলো জানা থাকলে সেটা ভালো চোখে দেখা হয়। অথবা অন্যান্য সফটওয়ার যা আপনার সাবজেক্টের নানা গবেষণার কাজে লাগে।
এছাড়া আপনার প্রফেশনাল কমিউনিটিতে (যেমন নানা প্রফেশনাল সোসাইটি, কম্পিউটার সাইন্সের ক্ষেত্রে এসিএম বা আইইইই) নানা সাংগঠনিক কাজে নাম থাকলে সেটা হালকা কাজে আসে (খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না)।
৫) যোগাযোগ — প্রফেসরদের সাথে আগে অনেকদিন ধরে যোগাযোগ হতে থাকলে সেটাও অনেক ভালো ভাবে কাজে আসে।
৬) কমিউনিকেশন স্কিল – ইংরেজিতে কেমন আপনি? শুদ্ধভাবে এবং প্রফেশনাল স্টাইলে ইমেইল বা স্টেটমেন্ট লিখতে পারেন কি? কথোপকথনে কেমন? এগুলোও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
—
যাহোক, উপরের এগুলো হলো কয়েকটা প্রধান ফ্যাক্টর যা পিএইচডিতে ভর্তির সময়ে প্রফেসরেরা দেখে থাকেন।
©️ Ragib Hasan
Edited by Tanjila Akther
Campus ambassador
National University Research and Higher Study Association